ঢাকা , শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
শিক্ষক রথীন্দ্র কুমার দাস স্মরণে শোকসভা টিলা কেটে সরকারি জায়গায় ইউপি চেয়ারম্যানের বহুতল মার্কেট ছয় থানার ওসি বদলি কমিশনকে নজরে রাখবে রাজনৈতিক দলগুলো সালমান-আনিসুল হক ফের রিমান্ডে দেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ১০৪ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি বাংলাদেশের সংস্কার উদ্যোগে সহায়তা দেবে জার্মানি হাওরকে বাঁচতে দিন আগস্টে সড়কে ঝরেছে ৪৭৬ প্রাণ কৃষি গুচ্ছের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা ২৫ অক্টোবর “অন্তর্বর্তী সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে হবে, তবে তা সীমাহীন নয়” ইজারাকৃত সব জলমহালের সীমানা নির্ধারণের দাবিতে বিক্ষোভ পদ হারিয়ে যুক্তরাজ্যে ফিরছেন আ.লীগ নেতারা সাবেক ৩ সিইসি’র বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা নিহতদের পরিবার পাবে ৫ লাখ টাকা হাওর উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে: মহাপরিচালক হাওর উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে: মহাপরিচালক অন্তর্বর্তী সরকারকে যেকোনও সহযোগিতা করতে প্রস্তুত ইউনেস্কো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি প্রধান বিচারপতির ১২ নির্দেশনা চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর বিবেচনার অনুরোধ
সুনামগঞ্জ জেলা কারাগার

কারারক্ষীদের বিক্ষোভ-ভাঙচুর, কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার দাবি

  • আপলোড সময় : ১১-০৮-২০২৪ ১২:১৪:০৬ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১১-০৮-২০২৪ ১২:১৪:০৬ পূর্বাহ্ন
কারারক্ষীদের বিক্ষোভ-ভাঙচুর, কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার দাবি
সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক (জেল সুপার), কারাধ্যক্ষ (জেলার) উপকারাধ্যক্ষসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তাদের প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন কারারক্ষীরা। এই দাবিতে বিক্ষোভ ও কারাগারের প্রশাসনিক ভবনে ভাঙচুর হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর রাতেই কারাগারে সেনাসদস্যরা অবস্থান নেন।

এদিকে, শনিবার কারা উপমহাপরিদর্শক মো. ছগির মিয়া, সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সমর কুমার পাল কারাগারে গিয়ে কর্মকর্তা ও কারারক্ষীদের নিয়ে জরুরি বৈঠক (দরবার) করেছেন। বৈঠকে জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ শফিউল আলমকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারা উপমহাপরিদর্শক কারারক্ষীদের অন্য দাবিগুলো লিখিতভাবে তাকে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন।
শনিবার দুপুরে কারাগারে গিয়ে জানা যায়, ভেতরে জরুরি দরবার চলছে। দু-একজন কারারক্ষী ও সেনাসদস্য মূল ফটকের পাশে রয়েছেন। কারাগারের বাইরে কথা হয় স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে। তারা জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে হঠাৎ তারা মিছিল শুনে কারাগারের মূল ফটকে এসে দেখেন, প্রশাসনিক ভবনের সামনে কারারক্ষীরা বিক্ষোভ করছেন। এ সময় ক্ষুব্ধ হয়ে ওই ভবন ঢিল ছোড়া হয়। এতে ভবনের কিছু কাচ ভেঙে পড়ে। কারাগারের কর্মকর্তার তখন ভয়ে নীরব হয়ে যান।

স্থানীয় একজনের মুঠোফোনে ধারণ করা ওই ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, উত্তেজিত কারারক্ষীদের সঙ্গে থাকা একজন নারী কারারক্ষী বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি বলছেন, নারী কারারক্ষীদের সঙ্গে কর্মকর্তারা ‘অশ্লীল ব্যবহার’ (যৌন হয়রানি) করেন। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। দিন-রাত দায়িত্ব পালনে বাধ্য করেন। কোনো প্রতিবাদ করা যায় না। কোনো কিছু বললেই ডেকে নিয়ে চাকরিচ্যুত ও বরখাস্তের হুমকি দেওয়া হয়। একবার তাকে ডেকে নিয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ করায় তিনি এই অপমান সইতে না পেরে কোয়ার্টারে গিয়ে ৪১টি ঘুমের বড়ি খান। এরপর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। সুস্থ হওয়ার পর তিনি শুনেছেন, অন্য কারারক্ষীরা তাকে উদ্ধারের জন্য তখন অনুরোধ করলে কর্মকর্তারা তাদের বলেন, মারা যাওয়ার পর নাকি তার লাশ উদ্ধার করবেন। পরে প্রশাসন ও পুলিশের লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করেন। ওই নারী কারারক্ষী বলেন, আমি ডিআইজি, জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো ফল পাইনি। এই কর্মকর্তাদের এখান থেকে প্রত্যাহার করতে হবে।
কারারক্ষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ শফিউল আলম, কারাধ্যক্ষ হুমায়ূন কবীর, উপকারাধ্যক্ষ মনজুরুল ইসলাম, সুবেদার কবির ও হাবিলদার লিটনের ওপর চরমভাবে ক্ষুব্ধ তারা। কারারক্ষীদের সঙ্গে সব সময় অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এই কর্মকর্তারা। কারাগারের ভেতরের ক্যানটিন থেকে মাসে এক লাখ টাকা, বাইরের ক্যানটিন থেকে মাসে ৬০ হাজার টাকা তাদের দিতে হয়। বন্দীদের খাবারের বাজার থেকে ওই কর্মকর্তাদের পরিবারের জন্য বাজার সরিয়ে নিতে বাধ্য করা হয়। ছুটির জন্য তাদের ঘুষ দিতে হয়। বন্দীদের খাবারে চাল, ডাল, মাছ, মাংস কম দিয়ে তারা এ থেকে প্রাপ্ত টাকা ভাগাভাগি করে নেন। বন্দীদের নিয়ম অনুযায়ী খাবার দেওয়া হয় না। কোনো কারারক্ষী সামান্য প্রতিবাদ করলে তাকে জিম্মি করা হয়।

কারারক্ষীরা অভিযোগ করেন, সুবেদার কবির ও হাবিলদার লিটন বাইরে থেকে কারাগারের ভেতরে গাঁজা, ইয়াবা সরবরাহ করেন। তাদের কোনো তল্লাশি করা হয় না। মাদক ব্যবসার টাকা ভাগাভাগি করেন কর্মকর্তারা। সুবেদার কবির ও হাবিলদার লিটনকে ভেতর থেকে বাইরে যাওয়া-আসায় কোনো তল্লাশি করা হয় না। অথচ নারী কারারক্ষীদের তল্লাশি করানো হয় পুরুষ কারারক্ষীদের দিয়ে।

কারারক্ষীরা অভিযোগ করেন, জেল সুপারের গাড়ি দিনে ১৪ বার বাইরে যাওয়া-আসা করে। এ জন্য গেট খুলতে খুলতে অনেকের কোমরে ব্যথা ধরে গেছে। তত্ত্বাবধায়কের সন্তানের স্কুল, কোচিং, স্ত্রীর শপিং, বেড়ানো - সবই করেন সরকারি গাড়িতে। অথচ তারা অসুস্থ হলে ভ্যানে করে হাসপাতালে যেতে হয়।

বিক্ষোভে সময় কারারক্ষী সাইফার মনজুর ১১ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। এগুলো মধ্যে কারা প্রশাসনকে ঢেলে সাজানো, জনবল বৃদ্ধি, হয়রানি বন্ধ, ৬০ দিন ছুটি, আট ঘণ্টা দায়িত্ব পালনের সময় নির্ধারণ, যোগ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতি, কারা ক্যানটিনের লভ্যাংশের একটা অংশ কারারক্ষীদের প্রদান, কারারক্ষীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত, সন্তানদের খেলা মাঠ ও স্কুল প্রতিষ্ঠার দাবি রয়েছে।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানার জন্য জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ শফিউল আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তবে কারাধ্যক্ষ হুমায়ূন কবীর বলেন, সব অভিযোগ সত্য নয়। এর বেশি তিনি বলতে চাননি।

সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সমর কুমার পাল বলেন, আমরা সবার সঙ্গে কথা বলেছি। কারা তত্ত্বাবধায়ক এখন থেকে আর এখানে দায়িত্ব পালন করবেন না বলে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব, তার স্থলে আরেকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। -প্রথম আলো



নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স